গ্যারেজের পাশে এক চিলতে জমি। আমাদের সরস্বতী দি যে কিনা আমার সহধর্মিনীর সর্বক্ষণের কাজের সাথী ঐ অল্প একটু জায়গায় নানা ফুলের গাছ বসায়। জবা, টগর,গোলাপ,গাঁদা,রক্ত করবী—আরোও কত কি। শিউলী গাছটিও তারই তত্ত্বাবধানে তর তর করে বেড়ে উঠেছে দু বছরে। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত গ্যারেজের ছাদ ছাড়িয়ে বড় হয়ে ওঠা সত্ত্বেও তাতে ছিল না কোনো ফুল। গত শরতেও বাড়ির সকলের সাথে আমিও ভেবেছি কি করা যায় গাছটি নিয়ে। আগে ঠিক ওই জায়গাটাতে ছিল এক কাগজফুলের গাছ। রথের মেলা থেকে কেনা। সেটি ডালপালা বিস্তৃত করে গ্যারেজের ছাদ প্রায় ছেয়ে ফেললেও ফুলের আবির্ভাবে সজ্জিত হতে পারে নি কোনোদিনই। সবার মতো আমিও তাই ভাবতে বাধ্য হচ্ছিলাম বোধহয় মাটিতে সারের ঘাটতি রয়েছে বা বোধহয় মৌমাছি বা প্রজাপতির আগমন নেই আমাদের ঐ এক চিলতে জমিতে। ফলে ‘পলিনেসন্’ হচ্ছে না। সরস্বতী দির অবশ্য ঐ সব তথাকথিত চিন্তা মাথায় আসে নি কোনোদিন। শিউলী গাছটির প্রতি তার মায়া ছিল অটুট। গ্রীষ্ম হোক কি শীত, তার বিশেষ খেয়াল থাকতো সবসময় গাছটার প্রতি। যদি কখনো বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে আমার ছেলে বা তার বন্ধুরা ঐ গাছটির গায়ে বল মারতো নিতান্তই অনিচ্ছাকৃতভাবে, খেলার ছলেই, সরস্বতী দি যদি তা দেখতে পেতো , সব কাজ ফেলে পড়িমরি করে ছুটে যেতো তাদের দিকে। আমার ছেলে বা তার বন্ধুরা মজা পেয়ে হাসতো। ’গাছটাতে তো ফুল হয় না। কি হবে ওটাকে রেখে?’ এই ছিল যুক্তি সবার। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র সরস্বতীদি।
এবছর যখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে গাছটি ফুলে ভরে গেল, সরস্বতীদির মুখে এক অনির্বচনীয় গর্বের ভাব ফুটে উঠেছিল। আমরাও গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে ফুলের সুবাস নিয়ে শরতের সৌন্দর্য আরও একবার নূতন করে অনুভব করেছি আর আমার বার বার মনে পড়েছে আমার মার কথা আর সেই ফেলে আসা শিউলী গাছটির কথা যা আমাদের পুরোনো একতলা বাড়ির পিছনে ছিল ঠিক একটা ডুমুর গাছের পাশে। দুটিই আমার মায়ের যত্নে লালিত।
No comments:
Post a Comment